ফ্রীল্যান্সিংয়ে সফল হতে চাইলে কিছু বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আপনি যে সেক্টরেই ফ্রিল্যান্সিং করুন না কেন, আপনার দক্ষতার পাশাপাশি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো থাকলে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার সফল হয়ে উঠবে। তাহলে আসুন দেখে নেওয়া যাক- কাজকেন্দ্রিক সাধারণ দক্ষতার পাশাপাশি সফল ফ্রিল্যান্সারে কোন কোন বিষয়গুলো জানা থাকা প্রয়োজন:


লেনদেন: ফ্রিল্যান্সিং করা অনেক ক্ষেত্রে একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার মতো। এ ব্যবসাতে সব হিসাব-নিকাশ কার্যাবলী আপনাকেই সম্পন্ন করতে হবে। পরিপূর্ণভাবে আপনার লেনদেনের হিসাব রাখুন এবং সময়মতো যা পরিশোধ করা দরকার তা আদায় করুন। নিজের পাওনাগুলো বুঝে নেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হোন।
যোগাযোগের দক্ষতা: ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তাই ইংরেজীতে দক্ষতা থাকার পাশাপাশি আপনার যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে। ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে কাজ বুঝে নেয়া ও অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের থেকে কোনো সমস্যার সমাধান পেতে যোগাযোগ দক্ষতা খুবই প্রয়োজন।
সময় জ্ঞান: কোন কাজ করতে আপনার কত সময় লাগতে পারে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এতে করে আপনার সকল কাজ সঠিকভাবে ভাগ করে নিয়ে কাজটি যথাযথভাবে করতে পারবেন। তাছাড়া কাজ জমা দেয়ার ব্যাপারে সময়ানুবর্তীতা অবশ্যই প্রয়োজন।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ : ফ্রিল্যান্সাররা একা একা কাজ করে। তাই বলে তাদের জন্য অন্য কারও সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন নেই তা নয়। কাজের স্বার্থেই আপনাকে ক্লায়েন্ট ও অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। তাছাড়াও ব্যাক্তিজীবনে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে সময় দিন। নয়তো কাজ কিছুদিন পরেই আপনার কাছে একঘেয়ে মনে হবে। যা আপনার ক্যারিয়ারকে ধসিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
সময়োপযোগী দক্ষতা অর্জন : আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ডিজাইনার, প্রোগ্রামার বা লেখক যাই হোন না কেন; শুধু এক রকম দক্ষতা দিয়ে বর্তমান মার্কেটে টিকে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই আপনার কাজের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়েও কিছু কিছু দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করুন। যা আপনার সামনের পথ চলাকে সহজ করবে।
পরিচালনার দক্ষতা: ফ্রিল্যান্সারদের কাজের স্বার্থেই মাঝে মধ্যে কিছু ফ্রিল্যান্সারকে হায়ার করতে হয় কাজটি সম্পন্ন করার জন্য। তাই এরূপ কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা আপনার থাকতে হবে। যা আপনার কাজের পরিধি ও টিম গঠন ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে।
দর-কষাকষির দক্ষতা : ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো দর-কষাকষি। আপনার ক্লায়েন্ট থেকে কাজ বুঝে নেয়া, কাজের শর্তগুলো আলাপচারিতার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা, নিজের চাহিদামতো পারিশ্রমিক দাবি করার দক্ষতা আপনার থাকতে হবে। যা আপনার কাজের ভ্যালূ ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
নেটওয়ার্কিং দক্ষতা: একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের অবশ্যই এ ধরনের দক্ষতা থাকা জরুরী। অনলাইন ও অফলাইনে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ক্লায়েন্টের সাথে আপনার সম্পর্ক উন্নয়ন করার চেষ্টা করতে হবে। তাছাড়া আপনার চেনা-জানার পরিধিতে আপনার একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। যা আপনার যেকোন প্রয়োজন বা বিপদে সাড়া দিবে।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: একজন ভালো ফ্রিল্যান্সার মানেই দক্ষ হাতে সমস্যা সমাধানকারী। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার গন্ডীর ভেতরে থাকা সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধানের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
প্রজেক্ট পরিচালনা: সকল ফ্রিল্যান্সিং কাজেরই আলাদা আলাদা প্রজেক্ট থাকে। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার দায়িত্ব প্রজেক্টগুলো যেন সময়মতো এবং ক্লায়েন্টের শর্ত অনুযায়ী সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। তাই প্রতিটি প্রজেক্টের খুঁটিনাটি সকল বিষয় সম্পর্কে আপনাকে অবগত থাকতে হবে। সাথে প্রজেক্ট পরিচালনার দক্ষতাও থাকতে হবে।
সমস্যা নির্ণয়: কোনো কাজ সম্পন্ন করার পর কাজের খুঁটিনাটি সবকিছু পুনরায় পরীক্ষা করতে হয়। যেন কাজটিতে কোনো সমস্যা থেকে না যায় যা আপনার ক্লায়েন্টকে অসন্তুষ্ট করবে। নিজের কাজের ভুলগুলো নির্ণয় করতে পারাও একটি আলাদা দক্ষতা। যা অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে যখন একা একা কাজ করবেন।
প্রচার ও প্রসার: আপনার ফিল্যান্সিং কাজটি যদি ব্যবসায়ী ধরনের হয়, তবে ঠিকমতো প্রচার করা না গেলে এ সম্পর্কে অন্যরা জানতে পারবে না। এতে আপনার ব্যবসার সহজে প্রসারও ঘটবে না। তাই আপনার ব্যবসার মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে হবে। শুধু ফিল্যান্সার হলেও আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার সঠিক বিবরণ ক্লায়েন্টের কাছে তুলে ধরাও প্রচার-প্রসারের অন্তর্ভূক্ত।
গবেষণা করা: ফ্রিল্যান্সিং আপনি নিজের মতো করে একা একাই করছেন। তাই আপনার কাজ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় গবেষণা নিজেকেই করতে হবে। কাজের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে নতুন নতুন টেকনোলজি ও আপডেট সম্পর্কে খোঁজখবর রাখুন। এগুলো আপনার কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চলমান মার্কেট পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করবে।
বিক্রয় দক্ষতা: অনেকেই মনে করেন ফিল্যান্সার হলে ভালো বিক্রয় দক্ষতা না থাকলেও চলে। কিন্তু ভালো বিক্রয় দক্ষতা থাকলে অনেক কাজেই ভালো পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। এ ধরনের দক্ষতা আপনাকে সব খাতে ভাল সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে। তাই বিক্রয় দক্ষতা অর্জন করে রাখতে পারেন।
পূর্বপরিকল্পনা: কাজে সফলতা পাবার একটি অন্যতম শর্ত হলো পূর্বপরিকল্পনা। কোনো কাজ শুরু করার আগেই ভেবে নিন কাজটি আপনি কিভাবে করবেন? সঠিকভাবে, সঠিকসময়ে সম্পন্ন করতে পারবেন কি-না? এইসব বিষয়। আর অবশ্যই নিজের দক্ষতার চেয়ে বেশি কাজ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কাজের চাপ সামলানো: অনেক কাজের ফলে ফ্রিল্যান্সারদের ওপর বেশ চাপ পড়ে। এই চাপের ফলে প্রায়ই অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানসিক অস্থিরতাও দেখা দিতে পারে। তাই এসব চাপ সামলানোর জন্য আপনার মেন্টাল ও ফিজিক্যাল ষ্ট্রেন্থ থাকতে হবে। পূর্বপরিকল্পনা করে রাখলে কাজের চাপ সামলানো অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়।
সময়ানুবর্তীতা : ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার সময় নষ্ট করা চলবে না। মনে রাখবেন আপনি ফ্রিল্যান্সার। আপনাকে তদারকির জন্য আপনার মাথার ওপর কোনো বস নেই। তাই বলে সময় অপচয় করা চলবে না। সময় অপচয় করলে কোনো কাজেই সফলতার দেখা পাওয়া যাবে না। সময়ের কাজ সময়ে আদায় করে নিতে হবে; আর তা অবশ্যই নিজ তাগিদে।

Post A Comment:

0 comments: